নামঃ Capsicum
বৈজ্ঞানিক নামঃ Capsicum annum L.
বর্ণনাঃমিষ্টি মরিচ দক্ষিণ আমেরিকায় সম্ভবত ব্রাজিলে উৎপত্তি। এটি গ্রীন পেপার বা বেল পেপার নামেও পরিচিত। জাতভেদে পাকা মরিচের রং লাল বা হলুদ হতে পারে। বাংলাদেশে ঝালবিহীন এই মরিচ সবজি হিসাবে তরকারীতে ও সালাদে ব্যবহৃত হয়। তবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার ও চাষ খুব সীমিত।
পুষ্টিমানঃপ্রতি ১০০ গ্রাম (ভক্ষণযোগ্য) মরিচে ১.২৯ মি. গ্রাম প্রোটিন, ১১ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৮০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ, ১৭৫ মি.গ্রাম ভিটামিন-সি ও ০.৫৫ মি.গ্রাম নিয়াসিন আছে। অতএব ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিন থাকায় মানুষের জন্য পুষ্টিকর।
জলবায়ু ও মাটিঃঅতি শীত ও গরম এই মরিচের জন্য ক্ষতিকর। সাধারণত, ১৬-২৫ সে. তাপমাত্রায় মরিচের ফলন ভাল হয়। রাতের তাপমাত্রা ১৫ সে. এর নীচে এবং দিনের তাপমাত্রা ৩২ সে. এর উপরে ও জমিতে রসের অভাব হলে ফুল ঝরে যায়, ফলন্ত গাছের ফল বৃদ্ধি ব্যহত হয়। দিনের দৈর্ঘ্যের উপর ফলনের কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। বাংলাদেশে শীত মৌসুমে দোঁ-আশ ও জৈব সার সমৃদ্ধ মাটি এ মরিচের চাষের জন্য উপযুক্ত।
জাতঃবারি মিষ্টি মরিচ ১
বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা কতৃক উদ্ভাবিত জাত। ২০০৯ সালে এই জাতটি অবমুক্তায়িত হয়েছে। উজ্বল সবুজ বর্ণের বেল বা ঘন্টা আকৃতির। পাকলে এটা লাল বর্ণের হয়। গাছ প্রতি ৭/৮ টা ফল হয়। ফলের গড় ওজন ৭৫-৮৫ গ্রাম। ফলের দৈর্ঘ্য ৮-৯ সে.মি. ব্যাস ৭-৮ সে.মি.। ফলন ১৪-১৬ টন/হেঃ। বাংলাদেশের সর্বত্রই মধ্যম থেকে উচু জমিতে চাষ করা যায়।
বিদেশী কয়েকটি সংকর জাতের (এফ-১ হাইব্রিড)
ক) সুপার সেট (সাকাতা বীজ কোঃ)
আগাম জাত। গাছ ৫০-৬০ সে. মি লম্বা। মরিচের ত্বক মোটা, কাঁচা অবস্থায় চকচকে সবুজ এবং পাকলে লাল হয়। ফলের আকার ১০ ১১ সে.মি.।
খ) ৯০-এফ-৪ (সাকাতা বীজ কোঃ)
আগাম জাত। গাছ ৭০-৮০ সে.মি. লম্বা হয়। মরিচ লম্বায় ৮ সে. মি. ও ব্যাসে ১২ সে. মি.। কাঁচা মরিচ সবুজ ও পাকলে আকর্ষণীয় লাল হয়। ওজন ২০০ গ্রামের উপরে।
গ) ওয়ান্ডার বেল (তাকী বীজ কোঃ)
উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছ মাঝারী (৫০-৬০সে.মি.)। মরিচ গাঢ় সবুজ, পাকলে লাল, ত্বক মোটা, গড়ে ১২০ গ্রাম।
ঘ) জাম্বো সুইট (তাকী বীজ কোঃ)
গাছ লম্বায় ৭০ মে. মি. এর উপরে হয়। উচ্চ ফলনশীল আশু জাত। মরিচ লম্বায় (১৮ সে. মি.) ত্বক পুরু। কাঁচা মরিচ গাঢ় সবুজ ও পাকা অবস্থায় লাল, গড়ে ১৮০ গ্রাম।
ঙ) সিন্দুরী (নামধারী কোঃ)
কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পেকে লাল হয়। ত্বক মোটা ও চকচকে। মরিচের ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম। উচ্চ ফলনশীল জাত ও ৬৫ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ করা যায়।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সংকর জাত পাওয়া যায়। অতএব জাতের বৈশিষ্ট জেনে জাত নির্বাচন করতে হবে।
উৎপাদন পদ্ধতিঃপ্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশ) জমির জন্য ৩৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। প্রতিটি বীজতলায় (৩ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ৩০ সে.মি. উচু), ১০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। বীজতলা থেকে ৩/৪ পাতা বিশিষ্ট চারা পলিথিন ব্যাগে (৩ ভাগ মাটি, ১ ভাগ পঁচা গোবর, ১ ভাগ বালু) স্থানান্তরিত করতে হবে। চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে মূল জমিতে লাগানোর উপযুক্ত হয়।
জমি তৈরী ও চারা রোপণ পদ্ধতি
সেচ ও পানি নিষ্কাশন সুবিধা সহ উচু দোঁ-আশ জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। পরবর্তীতে জমি অনুযায়ী দৈর্ঘ্য, ১.৫ মিটার প্রস্থ, ২৫ সে. মি. উচু বেডে চারা লাগাতে হবে। সারি থেকে সারি ও চারা থেকে চারার দূরত্ব উভয় ক্ষেত্রে ৫০ সে. মি. হবে। দুই বেডের মাঝে ৪৫ সে. মি. নালা রাখা উচিত। চারা কার্তিক মাসের (১৫ অক্টোবর-১৪ নভেম্বরের) মধ্যেই রোপণ করতে হবে এবং রোপণের পর পরই হাল্কা সেচ দিতে হয়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ (বিঘা প্রতি)
সারের নাম
পরিমান (কেজি)
ভারমিকপ্স ১২০০
ইউরিয়া ৩০
টিএসপি
৪৫
এমপি
২৭
জিপসাম
১৫
প্রয়োগের সময় ও পদ্ধতিঃ
অর্ধেক ভারমিক্মপ্স জমি তৈরীর সময় দিতে হবে। বাকী অর্ধেক ভারমিক্মপ্স ও সবটুকু টিএসপি, ১/৩ অংশ ইউরিয়া ও এমপি এবং সবটুকু জিপসাম চারার জন্য নির্ধারিত বেডে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমপি দুই কিস্তিতে যথাক্রমে চারা রোপণের তিন ও চার সপ্তাহ পর গাছের গোড়ার চারিদিকে প্রয়োগ করতে হবে।
পরবর্তী পরিচর্যা
মাটি আলগা, আগাছা বাছাই, শুকনা মরা পাতা পরিষ্কার করা সহ মাঝে মাঝে চারার গোড়ায় মাটি দিতে হবে। এছাড়া জমিতে ২-৩ বার সেচ দিতে হবে। শুকনা খড়/ঘাস বা পলিথিন দিয়ে আচ্ছাদন দিলে জমিতে রসের অভাব হবে না। জলাবদ্ধতা যাতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। অকালে ফল ধরলে সেগুলো ফেলে দিতে হবে।
পোকা ও রোগ দমন পদ্ধতিঃ
পোকা/রোগের নাম ক্ষতির ধরণ প্রতিকার
জাব পোকা পাতার রস চুষে খায়। পাতার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত করে। ভাইরাস রোগ ছড়ায়। আগাছা দমন। নেট বা মশারী দ্বারা জমি ঢেকে দেওয়া, এডমায়ার ২০০ এস এল ০.৫ এম. এল/লিটার অথবা যিথিয়ন-৫৭ ইসি ২ এম,এল/লিটার অথবা লিমিথিয়ন ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ত্রিপস
আক্রান্ত পাতা উপরের দিকে শুকিয়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থানে মরিচা দাগ পড়ে। ঐ
মাকড়শা গাছের ডগা তামাটে হয়, পাতা নীচের দিকে কুকড়িয়ে যায়, আক্রান্ত ফলের ত্বক খসখসে হয়। অমিট/ভার্টিম্যাক/সালফোটারক্স/এনিমাইট ২ (দুই) গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার দিকে স্প্রে করতে হবে।
এ্যানথ্রাক্সনোজ বা ঝলসানো রোগ আক্রান্ত ফলে বাদামী কালো রং এর দাগ পড়ে ও পচে যায়। বেভিষ্টিন বা নোইন ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফাইটোপথোরা ব্লাইট আক্রান্ত পাতা, কান্ড ও ফল ঝলসে যায়। রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ভাইরাস (কিউকামবর/মটেল ভাইরাস) পাতা হাল্কা সবুজ ছোট ও কুকড়ে যায়। গাছ খর্বাকৃতির হয়, ফুল ও ফল ধারণ ব্যহত হয়। আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। রোগবাহী পোকা (যেমন জাব পোকা /সাদা মাছি পোকা) কীটনাশক দিয়ে দমন করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ
কাঁচা ও পাকা অবস্থায় মরিচ সংগ্রহ করা যায়। মরিচ সংগ্রহের পর ছায়াতে ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে। ৯৫% আর্দ্রতা ও শুন্য সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মরিচ প্রায় ৪০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ফলনঃ
ফলন জাত ও ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে। প্রতি বিঘায় ১২০০-১৪০০ কেজি হতে পারে।
Badal01 –
নাইস
Babor160 –
Very good information.