নামঃ গোল লাউ
বৈজ্ঞানিক নাম: Lagenaria siceraria
বর্ণনাঃশীতকালে লাউয়ের ফলন বেশি হয়। তবে উচ্চতাপ ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু ফলে লাউয়ের চাষাবাদ সারা বছর করা যায়।
গোল জাতের লাউ এর চাহিদা বেশি এ জাতের লাউ চাষ করলে লাভবান বেশি হওয়া সম্ভব।
লাউ চাষ পদ্ধতিঃ
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ, এঁটেল বা বেলে দো-আঁশ মাটির উঁচু জমি লাউ চাষের জন্য উত্তম।
যেহেতু এটেল মাটি পানি ধরে রাখে, তাই খরা মৌসুমে এটেল মাটিতে লাউয়ের চাষাবাদ ভাল হয়।
বাংলাদেশে শীতও বেশি না, গরমও বেশি না এমন আবহাওয়া লাউয়ের চাষাবাদের বেশি উপযোগী।
শীতকালটা লাউ চাষের জন্য উত্তম। তবে, শীতকালীন আগাম লাউয়ের চাষাবাদ জন্য ভাদ্রের প্রথমে এই সবজির চাষ করা ভাল।
শীতকালে তাপমাত্রা কখনো ১০০ সে. এর নিচে নেমে গেলে, তা লাউয়ের চাষাবাদের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। দিন ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য ৮-৯০ হলে ভালো।
জমি ও মাদা তৈরীঃ
লাউ চাষের জন্য জমি নির্বাচন করতে হবে সেচ ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন।
লাউ গাছের শিকড় ব্যাপক বৃদ্ধির জন্য উত্তমরূপে জমি ৩-৪ বার চাষ ও মাই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। যাতে সহজে শেকড় অনেক দুর যেতে পারে।
লাউয়ের চাশাবাদে জৈব সারের ব্যাপক ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
তবে এগুলো জমিতে চাষের আগে প্রয়োগ করে বেড তৈরি করা উত্তম। বেড তৈরি ও বেড থেকে বেডের দূরত্ব…
বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি.।
উচ্চফলনশীল গোল লাউ বীজ (হাইব্রিড)
উচ্চফলনশীল গোল লাউ বীজ (হাইব্রিড)
বেডের প্রস্থ হবে ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে নিতে হবে।
এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে।
এরূপ পাশাপাশি ২টি বেড়ের মাঝখানে ৬০ সেমি. ব্যাসের সেচ নালা থাকবে।
এবং প্রতি ২ বেড অন্তর ৩০ সেমি প্রশস্ত শুধু নিকাশ নালা থাকবে।
মাদা তৈরি এবং মাদার দূরত্ব
মাদার আকার হবে ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি. গভীরতা ৫০-৫৫ সেমি. এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি.।
বেডের যে দিকে ৬০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে সেদিকে বেডের কিনারা হতে ৬০ সেমি. বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে।
একটি বেরের যে কিনারা হতে ৬০ সেমি. বাদ দেয়া হবে, তার পার্শ্ববর্তী বেডের ঠিক একই কিনার থেকে ৬০ সেমি. বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে অনুরূপ নিয়মে মাদা করতে হবে।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ
দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা লাউ গাছ ফলন পাওয়া যায় লম্বা সময়কাল ধরে। এ জন্য লাউয়ের চাষা সফলতা পেতে গাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চির করতে হবে।
লাউ চাষের জন্য জমি তৈরির সময় সারের যে মাত্রা সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও বোরক্স সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।
মাদায় চারা রোপণের যে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হয়েছে তা দেওয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
তারপর ‘জো’ এলে ৭-১০ দিন পর চারা লাগাতে হবে।
প্রতি মাদায় ২০০ গ্রাম টিএসপি + ১০০ গ্রাম জিপসাম + ৫০ গ্রাম এমওপি + (জিংক, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম, কার্বোফুরান ১৫-২০ গ্রাম হারে দেয়া যায়)। আর বেশি বেশি গোবর বা জৈব সার দিলে অতি উত্তম।
লাউয়ের চারা তৈরী ও বপন পদ্ধতিঃ
লাউ বীজ সরাসরি জমিতে বপন করা যায়। তবে চারা তৈরী করেও বপন করা উত্তম।
চারা তৈরী করে রোপনে নিরাপত্তা, সময় কম ও ফলন বেশি হয়।
প্রথমে বীজ ২-১ ঘন্টা রোদ্রে রেখে তা ছায়ায় ঠান্ডা করে নিতে হবে। এর পর ২০-২৫ ঘন্টা পানিতে রেখে দিতে হবে।
শেষ ১০ মিনিট ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে কার্বেন্ডাজিম দিয়ে শোধন করে নিতে পারেন।
এর পর সবচেয়ে ভালো হয় বীজগুলো গরম কাপড়/ ছালার চট ভিজিয়ে তাতে পেচিয়ে ২ দিন অপেক্ষা করা।
দুই দিনে বীজ ফেটে শেকড় বের হলে তা সাবধানে পলিব্যাগে বপন করতে হবে।
মাটিতে রস না থাকলে সামান্য একটু পানি দিতে হবে।
পলিব্যগে ২ ভাগ এটেল মাটির সাথে ১ ভাগ পচা ঝুরঝুরে গোবর মিক্স করে নিতে হবে।
অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার জন্য পলি ব্যগের নিচে ফুটো করে নিতে হবে। পলিব্যাগে রোপনের ৩ দিন পর গাছ বের হবে।
গাছ বের হওয়ার ১৫-১৭ দিন পর চারা গাছের ৩-৪ টা পাতা আসলে তা রোপনের উপযুক্ত হবে।
রোপনের আগ পর্যন্ত গাছগুলো আদা-ছায়ায় রাখতে হবে।
মাদা প্রতি ২-৩ টি চারা রোপন অথবা ৩-৪ টি বীজ বপন করতে হবে।
পরবর্তীতে মাদায় ২-১ টি গাছ রাখলেই চলবে। জমি শুকনো থাকলে চারা রোপন করে পানি দিতে হবে।
প্রখর রৌদ্র থাকলে রোপনকৃত চারা কিছু দিয়ে রোদ থেকে আড়াল করে রাখতে হবে।
চারা পরিচর্যাঃ
লাউ বীজ
আয়মন ১ লাউ বীজ কিনুন
বিটল পোকা এসে পাতা খেয়ে নিলে ছাই, কেরোসিন+পানি, অথবা সাইপারমেথ্রিন/ক্লোরপাইরিফস হালকা করে স্প্রে করতে হবে অথবা মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
১৫ দিন পর ২ কেজী ইউরিয়া ও দেড় কেজী এমওপি সার (এই হারে) মিক্স করে প্রতি মাদায় ২-৩ মুঠ করে গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দুরে গোল করে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
গাছ লতা নিতে শুরু করলে বাশের কঞ্চি বা শক্ত কাঠি দিতে হবে।
লাউ গাছের মাচা তৈরীঃ
মাচায় লাউ চাষে কাঙ্খিত ফলন পাবেন। আর মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজারমূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কমে যাওয়ার ফলে ফলনও কমে যায়।
লাউয়ের গাছ অনেক ভারি, তাই মাচা মজবুত করে দিতে হবে যতে ভারিতে ভেঙে না পড়ে।
এছাড়া চারিদিকে টানা দিয়ে রাখতে হবে।
লাউ গাছের পরিচর্যাঃ
লাউয়ের অধিক ফলন পাওয়ার জন্য অধিক পরিচর্যা করতে হয়। লাউ গাছ মাচায় ওঠার সময় গোড়া থেকে অনেক শোষক শাখা বের হয়।
Reviews
There are no reviews yet.