নামঃ কালো তরমুজ
বৈজ্ঞানিক নামঃWatermelon Cultivation
বর্ণনাঃ তরমুজ চাষের সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেক কৃষক। সুস্বাদু ফল তরমুজের ব্যাপক চাহিদা গ্রীষ্মকালে। চাহিদা থাকার কারণে চাষিরাও তরমুজ চাষে বেশ আগ্রহী।
উন্নত জাতের তরমুজঃ
জাম্বু, গ্লোরি, ড্রাগন কিং । ফিল্ডমাষ্টার, ওয়াল্ড কুইন, বিগ টপ, পাকিজা, সুইট ক্রাঞ্চ ।
সুইট গ্রীন, সুইট ড্রাগন, গ্রীন ডায়মন্ড, সুগার কিং, কালো মানিক।
ডক্টর সুপার, ব্ল্যাক জায়ান্ট । ড্রাগন, সুপার ড্রাগন । পাওয়ার, উইনার, বিগ ফ্যামেলি ইত্যাদি।
সুগার বেবি জাতের তরমুজ দেশে খুব জনপ্রিয়। জাতটি বারো মাসই উৎপাদন করা যায়। আবার ইয়োলো বেরী তরমুজের উপরে হলুদ ও ভিতরে লাল এবং সাম্মাম জাতের তরমুজে উপরে গারো হলুদ ভিতরে লাল। এদের প্রতিটির ওজন হয় প্রায় ৫ কেজি করে।
জলবাযু ও মাটিঃ
উচ্চফলনশীল স্পেশাল তরমুজ বীজ।
তরমুজ ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। ফলটি চাষের জন্য প্রচুর সূর্যালোক প্রয়োজন। শুষ্ক,উষ্ণ ও প্রচুর সূর্যের আলো পায় এমন স্থানে তরমুজ ভালো হয়ে থাকে।
তরমুজ পাকার সময় সূর্যের আলোর অভাব হলে ফলের স্বাদ অর্থাৎ মিষ্টতা ও ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যায়। তরমুজ চাষের গড় তাপমাত্রা ২৫০ সেলসিয়াস ও ফল পাকার সময় ২৮০ থেকে ৩০০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা সর্বাপেক্ষা উপযোগী।
তবে অধিক আর্দ্রতা তরমুজ চাষের জন্য ক্ষতিকর।
খুব সহজে পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত জমির পাশা-পাশি; উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
বীজ বপন বা তরমুজ চাষের সময়ঃ
সাধারণত এ অঞ্চলের আবহাওয়া ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তরমুজ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
এছাড়া, আগাম কিছু জাতের তরমুজ আছে যেগুলো নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বপন করা যাবে।
তবে, এর জন্য শীতের হাত থেকে কচি চারা রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তরমুজের কচি চারা রক্ষায় পলি টানেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
বীজ বোনার জন্য জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিন সর্বোত্তম।
বীজের পরিমাণঃ
তরমুজের জাতভেদে প্রতি শতকে ১.৫-২ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করা যাবে।
চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে |
বীজ থেকে চারা তৈরিঃ
শীতকালে তরমুজ বীজের অঙ্কুরোদগম সমস্যায় পড়তে হয়। সাধারণত বীজের অঙ্কুরোদগম জন্য তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৫-৩০ ডিগ্রি সে: প্রয়োজন। ১৫ ডিগ্রি সে: এর নিচের তাপমাত্রায় তরমুজের বীজ গজায় না৷
এজন্য-
বীজের সুপ্ততা ভাঙতে ৪০-৫০ মিনিট রোদে শুকিয়ে নিবেন।
তারপর বীজকে ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উঠিয়ে প্রোভ্যাক্স ৩ গ্রাম/ ১ লি অথবা কার্বেন্ডাজিম মিশ্রিত পানিতে আরো ৩০ মিনিট ভিজিয়ে শোধন করে তারপর উঠিয়ে গোবরের মাদার ভিতর কিংবা মাটির পাত্রে লাগাতে হবে।
তীব্র শীতে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে পলিথিন ব্যাগে বীজ ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখা এমনকি ভেজা কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে খড়ের গাদায় রেখে দিলেও উত্তাপে ২/৩ দিনের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরিত হবে৷
বীজের অঙ্কুরোদগম দেখা দিলেই বীজ তলায় অথবা মাঠে স্থানান্তর করা ভালো।
চারা তৈরির জন্য ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি ও পচা গোবর সার ভর্তি করে প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বপন করতে হবে।
তরমুজ চাষ জমি তৈরিঃ
প্রয়োজন অনুযায়ী ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তরমুজ চাষের জমি তৈরি করতে হবে।
জমি তৈরির পর মাদা প্রস্তুত করতে হবে। মাদাতে সার প্রয়োগ করে চারা লাগানো উচিত।
প্রতি মাদা ৫০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত ও গভীর হওয়া প্রয়োজন।
তবে মালচিং করে মাচা তৈরি করা সবচেয়ে উত্তম। এতে ফসল বৃস্টির হাত বা মাটিতে থাকা পোকা থেকে ফল রক্ষা পায়।
সেক্ষেত্রে জমির আইল থেকে ২ ফিট ফাকা রেখে ৩ ফিটের বেডের পাশে ৭ ফিট ফাকা রাখতে হবে।
এখানে মাচা বানাতে হবে। তার পাশে ৩ ফিটের পাশাপাশি দুইটি বেডের পাশে ২ ফিট ফাকা রাখতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
তরমুজের জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার (শতাংশ প্রতি) প্রয়োগ করা যেতে পারে ( বেড তৈরির সময় )
ভার্মি কম্পোস্ট/কম্পোস্ট ৮০-৯০ কেজি
টিএসপি ৪০০-৪৫০ গ্রাম
ডিএপি ৮০০-৯০০ গ্রাম
এমওপি ৪০০-৪৫০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০-৪৫০ গ্রাম
দস্তা ৩০-৪০ গ্রাম
বোরন ৪৫-৫০ গ্রাম
১ম কিস্তি (চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর)
ইউরিয়া ৪০০-৪২০ গ্রাম
এমপি ৩২০-৩৩০ গ্রাম
২য় কিস্তি (প্রথম ফুল ফোটার সময়)
ইউরিয়া ২৪০-২৫০ গ্রাম
এমপি ৩২০-৩৩০ গ্রাম
৩য় কিস্তি (ফল ধারণের সময়)
ইউরিয়া ২৪০-২৫০ গ্রাম
এমপি ৩২০-৩৩০ গ্রাম
৪র্থ কিস্তি (ফল ধারণের ১৫-২০ দিন পর)
ইউরিয়া ২৪০-২৫০ গ্রাম
এমপি ৩২০-৩৩০ গ্রাম
চারা রোপ
উচ্চফলনশীল কালো তরমুজ বীজ (হাইব্রিড)
উচ্চফলনশীল কালো তরমুজ বীজ (হাইব্রিড)
তরমুজের বীজ বপণের চেয়ে চারা রোপণ করা উত্তম। চারা তৈরি করে মাদাতে চারা রোপণ করা ভালো।
কারণ, তরমুজের বীজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই বীজ বপনের ক্ষেত্রে অনেক বীজ অপচয় হয়। চারা রোপণ করা গেলে বীজের অপচয় কমানো যায়।
মূলত একমাস বয়সের ৪-৫ পাতাবিশিষ্ট একটি চারা মাদায় রোপণ করা উত্তম।
মাচা তৈরিঃ
দুই বেডের মাঝে আড়াই হাতের ৪ টি খুটি সমান্তরালে কয়েক হাত পর পর পুতে দিতে হবে।
খুটির সাথে বাশের বাতা, কাবারি বা চটা কট শুতা বেধে উপরে নেট তুলে ছাঊনি করে, মাচা তৈরি করতে হবে।
পরিচর্যাঃ
চারাগুলো বড় হলে এর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা বের হতে থাকে। গাছের চার থেকে পাঁচটি শাখা-প্রশাখা রেখে বাকিগুলো ছেঁটে ফেলতে হবে।
এছাড়া প্রতি শাখায় একটি করে ফল রেখে অতিরিক্ত ফল ফেলে দিলে ভালো মানের ফল পাওয়া যাবে। প্রতিটি গাছে ৩-৪টির বেশি ফল রাখতে নেয়। গাছের শাখার মাঝামাঝি গিটে যে ফল হয় সেটি রাখতে হয়।
তরমুজের গাছ খরা সহ্য করতে পারে। তবে শুকনো মৌসুমে অবশ্যই সেচ দেওয়া প্রয়োজন। খেয়াল রাখতে হবে, গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে থাকে।
তরমুজ যখন বড় হয়, তখন মাটির ওপর খড় বিছিয়ে দিতে হবে। কারণ, মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে তরমুজ গোড়াপচা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগবালাই
তরমুজের ভালো ফলন পেতে চারার পোকামাকড় ও রোগ দমন করতে হবে। এজন্য চারা লাগানোর ১৫ দিন পর মাছি পোকা দমনে ফেরোমন ফাদ, হলুদ ফাদ লাগিয়ে দিতে হবে।
জাব পোকা:
এ পোকা গাছের কচি কাণ্ড, ডগা ও পাতার রস শুষে খেয়ে ক্ষতি করে।
এ পোকা দমনের জন্য হেমিডর/প্রিমিডর (ইমিডাক্লোপ্রিড) ৭০ ডব্লিউজি ০২গ্রাম/১০লিটার জলে অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় টিডো(০.৫মিলি/লিটার) / ইমিটাফ(১ মিলি/লিটার) / এডমায়ার (০.২৫ মিলি/লিটার) জলে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
কাণ্ড পচা রোগ:
এই রোগের আক্রমণের ফলে তরমুজ গাছের গোড়ার কাছের কাণ্ড পচে গাছ মরে যায়।
এই রোগ দমনের জন্য মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- ডাইথেন/ইণ্ডোফিল এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার অথবা মেনকোজেব + কার্বেন্ডাজিম ( কম্প্যানিয়ন/ কেমামিস্ক/ক্লাস্টার) ২ গ্রাম/লিটার বা কপার অক্সিক্লোরাইড ( সানভিট/ডিলাইট) অনুমোদিত মাত্রায় ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
দমন কাটুই পোকাঃ
এ পোকা রাতেরবেলা চারা কেটে দেয়। সকালবেলা চারা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
কাটুই পোকা দমনের জন্য সকালে কেটে ফেলা চারার আশেপাশে মাটি খুঁড়ে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে। কেরোসিন-মিশ্রিত পানি সেচ দিতে হবে।
পাখি বসার জন্য জমিতে ডালপালা পুঁতে দিতে হবে, যাতে পাখিরা পোকা খেতে পারে।
রাতে জমিতে মাঝেমধ্যে আবর্জনা জড়ো করে রাখলে সেগুলোর নিচে এসব পোকা এসে জমা হয়, সকালে সেগুলোকে মেরে ফেলতে হবে।
আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকালে স্প্রে করতে হবে।
দু’একটি চারা কাটতে দেখলে অবহেলা না করে দ্রুত পোকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা লাগানোর পর নিয়মিত জমি পরিদর্শন করতে হবে।
ডাউনি মিলডিউঃ
বয়স্ক পাতায় এ রোগ আক্রান্ত করে। আক্রান্ত পাতার গায়ে সাদা বা হলদে থেকে বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়।
ধীরে ধীরে অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাসঃ
ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পাতা হলুদ ও সবুজের মিশ্রণের একটি রঙের সৃষ্টি হয়। গাছ বাড়ে না। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ফুল ধরলেও ফল ধরে না। অনেক সময় ফল ধরলেও বড় হয় না।
আক্রান্ত গাছ হতে সুস্থ গাছে ভাইরাস ছড়ানোর জন্য বাহক প্রয়োজন। এ বাহক হিসেবে কাজ করে সাদা মাছি। এজন্য সংক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
আর সাদা মাছি নিয়ন্ত্রণের জন্য অনুমোদিত কোনো বালাইনাশক ওষুধ স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অনেক সময় মানুষও বাহক হতে পারে। এজন্য আক্রান্ত গাছ উঠানোর পর সুস্থ গাছে হাত দেওয়ার আগে হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সাবধানতাঃ
একই জমিতে বারবার তরমুজ চাষ করা যাবে না। দিনের বেশিরভাগ সময় ছায়া পড়ে এমন জমিতে তরমুজ ফসল চাষ করবেন না।
কীটনাশক স্প্রে করার ১৫ দিনের মধ্যে সেই ফল খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে না। রোগ প্রতিরোধী জাত বাছাই করে চাষ করা উচিত।
ফসল সংগ্রহঃ
জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে তরমুজ পাকে। সাধারণত ফল পাকতে বীজ বোনার পর থেকে ৮০-১১০ দিন সময় লাগে।
ফল পেকেছে কি না, তা বোঝা খুব কঠিন। তবে কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে অনুমান করা যায়
উন্নত জাতের তরমুজঃ
জাম্বু, গ্লোরি, ড্রাগন কিং (সুপ্রিম সীড)। ফিল্ডমাষ্টার, ওয়াল্ড কুইন, বিগ টপ, পাকিজা, সুইট ক্রাঞ্চ (এ আর মালিক)।
সুইট গ্রীন, সুইট ড্রাগন, গ্রীন ডায়মন্ড, সুগার কিং, কালো মানিক(ইস্পাহানি)।
ডক্টর সুপার, ব্ল্যাক জায়ান্ট (লাল তীর)। ড্রাগন, সুপার ড্রাগন (সিনজেন্টা)। পাওয়ার, উইনার, বিগ ফ্যামেলি ইত্যাদি।
সুগার বেবি জাতের তরমুজ দেশে খুব জনপ্রিয়। জাতটি বারো মাসই উৎপাদন করা যায়। আবার ইয়োলো বেরী তরমুজের উপরে হলুদ ও ভিতরে লাল এবং সাম্মাম জাতের তরমুজে উপরে গারো হলুদ ভিতরে লাল। এদের প্রতিটির ওজন হয় প্রায় ৫ কেজি করে।
জলবাযু ও মাটিঃ
উচ্চফলনশীল স্পেশাল তরমুজ বীজ (হাইব্রিড)
উচ্চফলনশীল স্পেশাল তরমুজ বীজ (হাইব্রিড)
তরমুজ ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। ফলটি চাষের জন্য প্রচুর সূর্যালোক প্রয়োজন। শুষ্ক,উষ্ণ ও প্রচুর সূর্যের আলো পায় এমন স্থানে তরমুজ ভালো হয়ে থাকে।
তরমুজ পাকার সময় সূর্যের আলোর অভাব হলে ফলের স্বাদ অর্থাৎ মিষ্টতা ও ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যায়। তরমুজ চাষের গড় তাপমাত্রা ২৫০ সেলসিয়াস ও ফল পাকার সময় ২৮০ থেকে ৩০০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা সর্বাপেক্ষা উপযোগী।
তবে অধিক আর্দ্রতা তরমুজ চাষের জন্য ক্ষতিকর।
খুব সহজে পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত জমির পাশা-পাশি; উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
বীজ বপন বা তরমুজ চাষের সময়ঃ
সাধারণত এ অঞ্চলের আবহাওয়া ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তরমুজ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
এছাড়া, আগাম কিছু জাতের তরমুজ আছে যেগুলো নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বপন করা যাবে।
তবে, এর জন্য শীতের হাত থেকে কচি চারা রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তরমুজের কচি চারা রক্ষায় পলি টানেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
বীজ বোনার জন্য জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিন সর্বোত্তম।
বীজের পরিমাণঃ
তরমুজের জাতভেদে প্রতি শতকে ১.৫-২ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করা যাবে।
চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে |
বীজ থেকে চারা তৈরিঃ
শীতকালে তরমুজ বীজের অঙ্কুরোদগম সমস্যায় পড়তে হয়। সাধারণত বীজের অঙ্কুরোদগম জন্য তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৫-৩০ ডিগ্রি সে: প্রয়োজন। ১৫ ডিগ্রি সে: এর নিচের তাপমাত্রায় তরমুজের বীজ গজায় না৷
এজন্য-
বীজের সুপ্ততা ভাঙতে ৪০-৫০ মিনিট রোদে শুকিয়ে নিবেন।
তারপর বীজকে ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উঠিয়ে প্রোভ্যাক্স ৩ গ্রাম/ ১ লি অথবা কার্বেন্ডাজিম মিশ্রিত পানিতে আরো ৩০ মিনিট ভিজিয়ে শোধন করে তারপর উঠিয়ে গোবরের মাদার ভিতর কিংবা মাটির পাত্রে লাগাতে হবে।
তীব্র শীতে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে পলিথিন ব্যাগে বীজ ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখা এমনকি ভেজা কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে খড়ের গাদায় রেখে দিলেও উত্তাপে ২/৩ দিনের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরিত হবে৷
বীজের অঙ্কুরোদগম দেখা দিলেই বীজ তলায় অথবা মাঠে স্থানান্তর করা ভালো।
চারা তৈরির জন্য ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি ও পচা গোবর সার ভর্তি করে প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বপন করতে হবে।
তরমুজ চাষ জমি তৈরিঃ
প্রয়োজন অনুযায়ী ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তরমুজ চাষের জমি তৈরি করতে হবে।
জমি তৈরির পর মাদা প্রস্তুত করতে হবে। মাদাতে সার প্রয়োগ করে চারা লাগানো উচিত।
প্রতি মাদা ৫০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত ও গভীর হওয়া প্রয়োজন।
তবে মালচিং করে মাচা তৈরি করা সবচেয়ে উত্তম। এতে ফসল বৃস্টির হাত বা মাটিতে থাকা পোকা থেকে ফল রক্ষা পায়।
সেক্ষেত্রে জমির আইল থেকে ২ ফিট ফাকা রেখে ৩ ফিটের বেডের পাশে ৭ ফিট ফাকা রাখতে হবে।
এখানে মাচা বানাতে হবে। তার পাশে ৩ ফিটের পাশাপাশি দুইটি বেডের পাশে ২ ফিট ফাকা রাখতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
তরমুজের জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার (শতাংশ প্রতি) প্রয়োগ করা যেতে পারে ( বেড তৈরির সময় )
ভার্মি কম্পোস্ট/কম্পোস্ট ৮০-৯০ কেজি
টিএসপি ৪০০-৪৫০ গ্রাম
ডিএপি ৮০০-৯০০ গ্রাম
এমওপি ৪০০-৪৫০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০-৪৫০ গ্রাম
দস্তা ৩০-৪০ গ্রাম
বোরন ৪৫-৫০ গ্রাম
১ম কিস্তি (চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর)
ইউরিয়া ৪০০-৪২০ গ্রাম
এমপি ৩২০-৩৩০ গ্রাম
২য় কিস্তি (প্রথম ফুল ফোটার সময়)
ইউরিয়া ২৪০-২৫০ গ্রাম
এমপি ৩২০-৩৩০ গ্রাম
৩য় কিস্তি (ফল ধারণের সময়)
ইউরিয়া ২৪০-২৫০ গ্রাম
এমপি ৩২০-৩৩০ গ্রাম
৪র্থ কিস্তি (ফল ধারণের ১৫-২০ দিন পর)
ইউরিয়া ২৪০-২৫০ গ্রাম
এমপি ৩২০-৩৩০ গ্রাম
চারা রোপ
উচ্চফলনশীল কালো তরমুজ বীজ (হাইব্রিড)
উচ্চফলনশীল কালো তরমুজ বীজ (হাইব্রিড)
তরমুজের বীজ বপণের চেয়ে চারা রোপণ করা উত্তম। চারা তৈরি করে মাদাতে চারা রোপণ করা ভালো।
কারণ, তরমুজের বীজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই বীজ বপনের ক্ষেত্রে অনেক বীজ অপচয় হয়। চারা রোপণ করা গেলে বীজের অপচয় কমানো যায়।
মূলত একমাস বয়সের ৪-৫ পাতাবিশিষ্ট একটি চারা মাদায় রোপণ করা উত্তম।
মাচা তৈরিঃ
দুই বেডের মাঝে আড়াই হাতের ৪ টি খুটি সমান্তরালে কয়েক হাত পর পর পুতে দিতে হবে।
খুটির সাথে বাশের বাতা, কাবারি বা চটা কট শুতা বেধে উপরে নেট তুলে ছাঊনি করে, মাচা তৈরি করতে হবে।
পরিচর্যাঃ
চারাগুলো বড় হলে এর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা বের হতে থাকে। গাছের চার থেকে পাঁচটি শাখা-প্রশাখা রেখে বাকিগুলো ছেঁটে ফেলতে হবে।
এছাড়া প্রতি শাখায় একটি করে ফল রেখে অতিরিক্ত ফল ফেলে দিলে ভালো মানের ফল পাওয়া যাবে। প্রতিটি গাছে ৩-৪টির বেশি ফল রাখতে নেয়। গাছের শাখার মাঝামাঝি গিটে যে ফল হয় সেটি রাখতে হয়।
তরমুজের গাছ খরা সহ্য করতে পারে। তবে শুকনো মৌসুমে অবশ্যই সেচ দেওয়া প্রয়োজন। খেয়াল রাখতে হবে, গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে থাকে।
তরমুজ যখন বড় হয়, তখন মাটির ওপর খড় বিছিয়ে দিতে হবে। কারণ, মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে তরমুজ গোড়াপচা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগবালাই
তরমুজের ভালো ফলন পেতে চারার পোকামাকড় ও রোগ দমন করতে হবে। এজন্য চারা লাগানোর ১৫ দিন পর মাছি পোকা দমনে ফেরোমন ফাদ, হলুদ ফাদ লাগিয়ে দিতে হবে।
জাব পোকা:
এ পোকা গাছের কচি কাণ্ড, ডগা ও পাতার রস শুষে খেয়ে ক্ষতি করে।
এ পোকা দমনের জন্য হেমিডর/প্রিমিডর (ইমিডাক্লোপ্রিড) ৭০ ডব্লিউজি ০২গ্রাম/১০লিটার জলে অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় টিডো(০.৫মিলি/লিটার) / ইমিটাফ(১ মিলি/লিটার) / এডমায়ার (০.২৫ মিলি/লিটার) জলে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
কাণ্ড পচা রোগ:
এই রোগের আক্রমণের ফলে তরমুজ গাছের গোড়ার কাছের কাণ্ড পচে গাছ মরে যায়।
এই রোগ দমনের জন্য মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- ডাইথেন/ইণ্ডোফিল এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার অথবা মেনকোজেব + কার্বেন্ডাজিম ( কম্প্যানিয়ন/ কেমামিস্ক/ক্লাস্টার) ২ গ্রাম/লিটার বা কপার অক্সিক্লোরাইড ( সানভিট/ডিলাইট) অনুমোদিত মাত্রায় ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
দমন কাটুই পোকাঃ
এ পোকা রাতেরবেলা চারা কেটে দেয়। সকালবেলা চারা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
কাটুই পোকা দমনের জন্য সকালে কেটে ফেলা চারার আশেপাশে মাটি খুঁড়ে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে। কেরোসিন-মিশ্রিত পানি সেচ দিতে হবে।
পাখি বসার জন্য জমিতে ডালপালা পুঁতে দিতে হবে, যাতে পাখিরা পোকা খেতে পারে।
রাতে জমিতে মাঝেমধ্যে আবর্জনা জড়ো করে রাখলে সেগুলোর নিচে এসব পোকা এসে জমা হয়, সকালে সেগুলোকে মেরে ফেলতে হবে।
আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকালে স্প্রে করতে হবে।
দু’একটি চারা কাটতে দেখলে অবহেলা না করে দ্রুত পোকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা লাগানোর পর নিয়মিত জমি পরিদর্শন করতে হবে।
ডাউনি মিলডিউঃ
বয়স্ক পাতায় এ রোগ আক্রান্ত করে। আক্রান্ত পাতার গায়ে সাদা বা হলদে থেকে বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়।
ধীরে ধীরে অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাসঃ
ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পাতা হলুদ ও সবুজের মিশ্রণের একটি রঙের সৃষ্টি হয়। গাছ বাড়ে না। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ফুল ধরলেও ফল ধরে না। অনেক সময় ফল ধরলেও বড় হয় না।
আক্রান্ত গাছ হতে সুস্থ গাছে ভাইরাস ছড়ানোর জন্য বাহক প্রয়োজন। এ বাহক হিসেবে কাজ করে সাদা মাছি। এজন্য সংক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
আর সাদা মাছি নিয়ন্ত্রণের জন্য অনুমোদিত কোনো বালাইনাশক ওষুধ স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অনেক সময় মানুষও বাহক হতে পারে। এজন্য আক্রান্ত গাছ উঠানোর পর সুস্থ গাছে হাত দেওয়ার আগে হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সাবধানতাঃ
একই জমিতে বারবার তরমুজ চাষ করা যাবে না। দিনের বেশিরভাগ সময় ছায়া পড়ে এমন জমিতে তরমুজ ফসল চাষ করবেন না।
কীটনাশক স্প্রে করার ১৫ দিনের মধ্যে সেই ফল খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে না। রোগ প্রতিরোধী জাত বাছাই করে চাষ করা উচিত।
ফসল সংগ্রহঃ
জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে তরমুজ পাকে। সাধারণত ফল পাকতে বীজ বোনার পর থেকে ৮০-১১০ দিন সময় লাগে।
ফল পেকেছে কি না, তা বোঝা খুব কঠিন। তবে কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে অনুমান করা যায়
Reviews
There are no reviews yet.