নামঃ সাদা ফুলকপি
বৈজ্ঞানিক নামঃ ব্রাসিকা অলিরাসিয়া
বর্ণনা : ঠাণ্ডা ও আর্দ্রতা জলবায়ুতে ফুলকপির ভাল ফলন পাওয়া যায়। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন ধরনের সব মাটিতে ফুলকপির চাষ ভাল হয়। আমাদের দেশে মাঘী, অগ্রহায়ণী, পৌষালী, বারি ফুলকপি-১, ২ ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের ফুলকপি পাওয়া যায়। ফুলকপি বপনের উপযুক্ত সময় হল আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর। প্রতি শতকে বীজের পরিমাণ দুই গ্রাম। বীজতলার জন্য ৩ ×১ মিটার মাপের ১৫ সে.মি. উঁচু বেড তৈরি করলে ভাল হয়। বীজতলার উপরের স্তরে ১:১ অনুপাতে ভার্মি কম্পোস্ট/আবর্জনা সার এবং দো-আঁশ মাটির মিশ্রণ ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর তিন-চার সপ্তাহ পলিথিন দিয়ে মাটি ঢেকে রেখে শোধনের পর পাঁচ সে. মি. দূরে দূরে লাইনে ছিটিয়ে ১০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। অতিবৃষ্টি ও রোদের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য উপরে পলিথিন বা চাটাইয়ের আচ্ছাদন দিতে হবে। ১০ দিন পর দ্বিতীয় বীজতলায় পাঁচ সে.মি. পর পর সারি করে দুই সে.মি. দূরে দূরে শেষ বিকেলে স্থানানস্তর করতে হবে। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা স্থানানস্তরের পাঁচ দিন পর বীজতলার চারায় প্রতি ১০ লিটার পানির সাথে ৩০ গ্রাম সোহাগা মিশিয়ে স্প্রে করা অত্যাবশ্যক।
ফুল কপি এর জাতঃ
জাতের নাম : বারি ফুলকপি-১
জনপ্রিয় নাম : রুপা
উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)
গড় জীবনকাল প্রায় (দিন): ১০০
ফলনের গুণগত বৈশিষ্ট্য : ওজন ৮৫০-১০০০ গ্রাম
জাতের ধরণ : আগাম উচ্চ ফলনশীল
জাতের বৈশিষ্ট্য : ফুলকপি চারিদিকে পাতা দ্বারা আংশিক ঢাকা থাকে। সারাদেশে চাষ উপযোগী জাত।
শতক প্রতি ফলন (কেজি) : ১০০ – ১১২
হেক্টর প্রতি ফলন (টন) : ২৫-২৮
প্রতি শতক বীজতলায় বীজের পরিমান : ২ – ৩ গ্রাম
উপযোগী ভূমির শ্রেণী : মাঝারি উচু
উপযোগী মাটি : দোআঁশ, এটেল-দোআঁশ
উৎপাদনের মৌসুম : রবি
বপনের উপযুক্ত সময় :
ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করতে হয় এবং কার্তিক থেকে অগ্রহায়ন পর্যন্ত (মধ্য নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর) জমিতে চারা রোপণ করা যায়।
ফসল তোলার সময় : রোপণের ৬০-৭৫ দিন পর
জাতের নাম : বারি ফুলকপি-২
জনপ্রিয় নাম : নেই
উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)
গড় জীবনকাল প্রায় (দিন): ৬৫
ফলনের গুণগত বৈশিষ্ট্য : ওজন ৭৫০-৮০০ গ্রাম।
জাতের ধরণ : আগাম উচ্চ ফলনশীল
জাতের বৈশিষ্ট্য : আগাম জাতের ফুলকপি। সারাদেশে চাষের উপযোগী।
শতক প্রতি ফলন (কেজি) : ১০০ – ১১২
হেক্টর প্রতি ফলন (টন) : ২৫-২৮
প্রতি শতক বীজতলায় বীজের পরিমান : ২ – ৩ গ্রাম
উপযোগী ভূমির শ্রেণী : মাঝারি উচু
উপযোগী মাটি : দোআঁশ, এটেল-দোআঁশ
উৎপাদনের মৌসুম : রবি
বপনের উপযুক্ত সময় : আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বীজ বপনের সময়
ফসল তোলার সময় : রোপণের ৬০-৭৫ দিন পর।
পুষ্টিমান : ফুলকপির পুষ্টিগুন নানাবিধ, যেমন প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে ০.৮ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১.২% আঁশ, ৪১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২.৬% আমিষ, ৪১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৫ মিলিগ্রাম আয়রন, ০.০২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ ও ৭.৫% শর্করা ইত্যাদি পাওয়া যায়।
ভাল বীজ নির্বাচন : প্রতি হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষের জন্য ৩০০-৩৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। ভালোভাবে জমি তৈরি করার পর ১০-১৫ সে.মি. উঁচু পাশাপাশি ২ টি বেডের মাঝখানে ৩০ সে.মি. চওড়া ও ২৫ সেমি গভীর নালা রাখতে হবে।
বীজতলা প্রস্তুতকরণ : ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করুন। ১×৩ মিটার বীজতলায় সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে তৈরি করুন। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের ৭/৮ দিন আগে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি/ ডিএপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিন। চারা ঠিকমত না বাড়লে পরে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিন। বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হবে।
বীজতলা পরিচর্চা : ফুলকপি চাষের জন্য ৩০ দিন বয়সের চারা লাগাতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি হবে। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকতে হবে, যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয় ও বাড়ন কমে। রোপণের প্রথম কয়েক দিন প্রখর রোদে যাতে চারা ঝিমিয়ে না যায় তার জন্য কাগজ বা কলার খোল দিয়ে ছায়া দিতে হবে।
ফুল কপি এর চাষপদ্ধতি :
বীজতলা প্রস্তুতকরনঃ ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করুন। ১ ×৩ মিটার বীজতলায় সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে তৈরি করুন। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের ৭/৮ দিন আগে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি/ডিএপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিন। চারা ঠিকমত না বাড়লে পরে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিন। বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হবে।
চারা রোপণঃ ফুলকপি চাষের জন্য ৩০ দিন বয়সের চারা লাগাতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি হবে। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকুন, যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয় ও বাড়ন কমে। রোপণের প্রথম কয়েক দিন প্রখর রোদে যাতে চারা ঝিমিয়ে না যায় তার জন্য কাগজ বা কলার খোল দিয়ে ছায়া দিন।
তথ্যের উৎস : কৃষি প্রযুক্তি হাতবই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, সেপ্টেম্বর, ২০১৭।
কৃষি প্রযুক্তি হাতবই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, সেপ্টেম্বর, ২০১৭।
ফুল কপি এর মাটি ও সার ব্যবস্থাপনার তথ্য
মৃত্তিকা : পানি জমেনা এমন উর্বর দোঁয়াশ ও এঁটেল মাটি।
মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগারের ঠিকানা : মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
সার পরিচিতি : সার পরিচিতি বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
ভেজাল সার চেনার উপায় : ভেজাল সার শনাক্তকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
ভেজাল সার চেনার উপায় ভিডিও
ফসলের সার সুপারিশ :
সারের নাম
শতকপ্রতিসার
হেক্টর প্রতি সার
কম্পোস্ট
৬০-৮০ কেজি
১০ টন
ইউরিয়া
১-১.২ কেজি
২০০ কেজি
টিএসপি
০.৬-০.৮ কেজি
১৫০ কেজি
পটাশ
০.৮-১ কেজি
১৫০ কেজি
জিপসাম
৪০০ গ্রাম
১০০ কেজি
দস্তা
৪০ গ্রাম
১০ কেজি।
অনলাইন সার সুপারিশ বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
শতক প্রতি সার
হেক্টর প্রতি সার
অর্ধেক ভার্মি কম্পোস্ট, সমুদয় টিএসপি ও অর্ধেক গ্রাম পটাশ সার জমি তৈরির সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ভার্মি কম্পোস্ট চারা রোপণের ৭ দিন পূর্বে মাদায় দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হবে। চারা রোপণের ১৫ দিন পর ১ম বার, ৩০-৫০ দিন পর ২য় বার ইউরিয়া ও অবশিষ্ট পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।চারা রোপণের পূর্বে সার দেয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। অতঃপর মাটিতে জো এলে ৭-১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
চারা রোপণের ২০ দিন পর ১ম বার, ৪০ দিন পর ২য় বার ১৬০ কেজি ইউরিয়া ও ১০০ কেজি এমওপি সার দিন।***** ১০কেজি ডিএপি সার ব্যবহার করলে সমপরিমাণ টিএসপি এবং ৪ কেজি ইউরিয়ার ফল পাবেন, তাই সে পরিমাণ ইউরিয়া কম দিন। খেয়াল রাখুন; সকালে শিশির ভেজা পাতায় যেন দানা সার না পড়ে। জমির উর্বরতা, মাটির ধরণ, বা মাটি পরীক্ষা ভেদে সারের মাত্রা কম বেশি করুন।প্রথমে বোরন সার না দিলে পরবর্তীতে ১ম ও ২য় দফায় ইউরিয়া ও এমওপি সার দেয়ার সময় প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০-১৫ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে পাতায় স্প্রে করে দিন।
সেচ ব্যবস্থাপনা :
১। রোপনের পর প্রথম ৪-৫ দিন একদিন পরপরই সেচ দিতে হবে। পরবর্তীতে ৮-১০ দিন অন্তর বা প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিলেই চলবে।
২। সেচ পরবর্তী জমিতে “জো” আসলে ফুলকপির স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মাটি চটা ভেঙ্গে দিতে হবে এবং জমির আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
৩। সারের উপরি প্রয়োগ যথা সময়ে করতে হবে। উল্লেখ্য সারের উপরি প্রয়োগের পর অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
৪। পানি সেচ ও নিষ্কাশনের জন্য বেড সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে।
সেচ ও নিকাশ পদ্ধতি : ফুলকপি গাছের সারির মাঝে সার দেয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দিন। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। খেয়াল রাখুন জমিতে যেন পানি বেশি সময় ধরে জমে না থাকে।
Reviews
There are no reviews yet.