নামঃ কেরালা কিং
বৈজ্ঞানিক নাম: Mystus armatus
বর্ণনাঃ বারমাসি জাত কেরালা জাতের শিম। তাই এই শিম সারাবছরই চাষ করা যায়। সারা বছর একই রকম ফলন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের সব জায়গাতে কেরালা চাষ হয়।
জমি প্রস্তুতঃ
যে সকল জমিতে বর্ষার পানি উঠেনা এবং বৃষ্টির পানি জমে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে । বৃষ্টির পানি না জমলে সেই জমিতে উচু করে বেড তৈরি করার দরকার নেই। যদি বৃষ্টির পানি জমে থাকে তাহলে এমন ভাবে বেড তৈরি করতে হবে যাতে সীম গাছের গোড়া পানিতে না ডুবে যায়।
শিম গাছের মাদার দূরুত্বঃ
একটা মাদা থেকে আরেকটা মাদার দুরুত্ব হবে ২–৩ হাত এবং লাইন থেকে লাইনের দুরুত্ব হবে ৪.৫ হাত। অথবা প্রতি মাদায় একটি করে গাছ রাখতে চাইলে ২ ফিট পরপর মাদা তৈরি করতে হবে। আর লাইন থেকে লাইনের দুরত্ব হবে তখন ৩ ফিট।
শিম গাছের মাদায় সার প্রয়োগঃ
বেড বা মাদা তৈরি হয়ে গেলে সার প্রয়োগ করতে হবে। বিঘা প্রতি টিএসপি সার-১০ কেজি, এম. ও. পি. সার-৫ কেজি, বোরন সার-২ কেজি, দানাদার বিষ ২ কেজি, জিপসাম-১০ কেজি, সবগুলো সার মিশানোর পরে তৈরিকৃত মাদাতে সমভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তীকালে উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে।
বিঘা প্রতি ডিএপি-১০ কেজি, এমওপি-৫ কেজি, বোরন-১ কেজি একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়া থেকে ৩ থেকে৪ ইঞ্চি দূর দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।
বীজ রোপনঃ
সার প্রয়োগের ১ সপ্তাহ পর মাটি উলটপালট করে দিতে হবে। ১৫-১৬ দিন পরে মাদাতে ৩-৪ টি সীমের বীজ রোপন করতে হবে।
আন্তপরিচর্যাঃ
চারা বের হওয়ার পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে কেননা এসময় পোকামাকড়ের আক্রমন বেশি হয়। পোকা আক্রান্ত হলে হাতে দমন করতে হবে আক্রমন বেশি হলে রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। পোকামাকড়ের প্রকার ভেদে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
কেরালা শিমের মাচা তৈরিঃ
সীমের গাছের লতাকে বিছিয়ে দেওয়ার জন্য মাচা তৈরি করতে হবে। মাচা দেওয়ার জন্য বাঁশ ব্যবহার করতে হবে। মাচা তৈরি করার পর সীমের গাছ বাড়তে থাকলে মাচাতে বিছায়ে দিতে হবে।
কেরালার রোগ ও পোকা দমণঃ
এ জাতের সীমে রোগ ও পোকার আক্রমন কম। আগাম চাষ করলে পোকার আক্রমন কিছুটা বেশি হয় এ সময় লেদা পোকা গাছের পাতা খেয়ে ছিদ্র করে ফেলে। এ পোকা দমন করার জন্য সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি ১৬ লিটারে ২০মিলি+ এমামেকটিন বেনজয়েট ১৬ লিটারে ১০ গ্রাম হারে ব্যবহার করলে এ পোকা দমন করা যাবে। আগাম চাষের ফুলে পচন ধরতে পারে পচন দেখা মাত্রই নাটিভো ১৬ লিটারে ৫ গ্রাম / ফলিকুর ১৬ লিটারে ১৬ মিলি হারে ব্যবহার করতে হবে। যদি সীমের গাছের গোড়া পঁচে তাহলে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (১৬ লিটারের ড্রামে ২০ মিলি) দিয়ে গাছের গোড়া ভালো করে স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে।
কেরালা শিম চাষে বিশেষ পরিচর্যাঃ
যতদূর সম্ভব গাছের সংখ্যা কম রাখা ভাল। কারণ, অন্যান্য সীমে যেমন ফুলের ছড়া বা স্টিক ১০-১৫ ইন্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, কেরালা শিমের ফুলের ছড়াটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ ১-২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে, তবে কিছু কিছু কেরালা সীমের স্টিক বড় হয়। এমন প্রভাব খুব কম দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুলের ছড়া ছোট হয়। এজন্যই অন্যান্য শিমের চেয়ে এর পরিচর্যা একটু ব্যতিক্রম।এর ফুলের ছড়া ছোট হওয়ার কারনেই মুলত এর ভিন্ন পরিচর্যা দরকার।
প্রথম যে কাজটি করবেন তাহল- গাছের সংখ্যা কমিয়ে রাখা এবং সেই সাথে পাতার সংখ্যাও কমিয়ে রাখতে হবে। পাতা কেন কমাবেন, নিশ্চয় আপনার ভিতরে প্রশ্ন এসেছে, আচ্ছা চলুন দেখে নেয়- পাতা কমানোর রহস্য হল আপনি যখন স্প্রে করবেন তা যেন ফুলে উপর পড়ে আর যদি পাতা বেশি থাকে তবে ফুলে স্প্রে পড়বেনা। দ্বিতীয় কারনটি হল ফুলে সূর্যের আলো পড়তে হবে। যদি আপনার ফুল অতিরিক্ত পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে তাহলে ফুল সূর্যালোক পাবেনা। নিয়ম গুলো মেনে চললে আশা করি কাঙ্খিত ফলাফল পাবেন।
সীম সংগ্রহের সময় ও পরে করণীয়ঃ
কেরালা-১-জাতের-শিম
কেরালা শিম জাতটি খাটো জাতের। এটি অল্প বয়স থেকেই ফল দিতে থাকে। বীজ রোপনের ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ফুল চলে আসে এবং ৮০-৯০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রথম বার শিম সংগ্রহের পর জমিতে রাসায়নিক সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে, যেটি আমরা মাদায় সার প্রয়োগের সময় বলে দিয়েছি।
কেরালা শিমের ফলনঃ
বিঘা প্রতি কেরালা জাতের শিমের (৩৩ শতকে) ফলন সর্বনিম্ন ২০০০ থেকে ৩০০০ কেজি।
Reviews
There are no reviews yet.