নামঃ সাদা বাঁধাকপি
বৈজ্ঞানিক নামঃ Brassica oleracea.
বর্ণনাঃ শীতের অন্যতম ফসল বাঁধাকপি। ঠান্ডা পড়তে না পড়তেই বাঁধাকপি বাজারে চলে আসে। বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় এই সবজি ভীষণই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। সাদা রঙের এই বাঁধাকপিও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ রয়েছে এই জাতীয় বাঁধাকপিতে।
উন্নত জাতঃ বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতী), বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত), বারি চীনাকপি, ইপসা বাঁধাকপি-১
পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে ৯১.৯ গ্রাম পানি, ১.৮ গ্রাম আমিষ,০.১ গ্রাম চর্বি, ০.৬ গ্রাম খনিজ, ১.০ গ্রাম আঁশ, ৪.৬ গ্রাম শ্বেতসার রয়েছে। খনিজ লবনের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম ৩৯ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিগ্রা, ফসফরাস ৪৪ মিগ্রা, লৌহ ০.৮ মিগ্রা, সোডিয়াম ১৪.১ মিগ্রা, কপার ০.০৮ মিগ্রা ও সালফার ৬৭ মিগ্রা।
বপনের সময়ঃ আগাম জাতের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র থেকে ভাদ্র-আশ্বিন, মধ্যম আশ্বিন-কার্তিক কার্তিক-আগ্রহায়ণ এবং নাবি জাতের জন্য অগ্রহায়ণ-মধ্য পৌষ থেকে পৌষ-মধ্য মাঘ।
চাষপদ্ধতি: গভীর ভাবে ৪-৫টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর বা ৫/৬টি পাতা বিশিষ্ট ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা চারা সাধারণতঃ বিকেল বেলা জমিতে রোপণ করতে হয়। তবে সুস্থ ও সবল হলে চারা এক-দেড় মাস বয়সের চারা রোপণ করা যায়। রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দুরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি দিলে ভাল হয়। এ হিসেবে প্রতি শতকে ১৫০টির মত চারার প্রয়োজন হয়। আঙ্গিনায় ৫ মিটার লম্বা একটা বেডের জন্য ২০-২২টি চারার প্রয়োজন হয়। বেডে দুই সারিতে চারাগুলো লাগাতে হবে। আঙ্গিনায় লাগানোর জন্য যেহেতু কম চারার দরকার হয় সেজন্য কোন বিশ্বস-নার্সারি থেকে চারা কিনে লাগানো ভাল। তবে একটা বেডে বাঁধাকপির চারা তৈরি করে অল্পদিনের মধ্যেই তা বিক্রি করে যেমন অধিক লাভবান হওয়া যায় তেমনি নিজের প্রয়োজনও মেটানো যায়। এত ভাল চারা পাওয়াটা নিশ্চিত হয়।
বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ১.৫-২ গ্রাম।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম
শতক প্রতি সার/হেক্টর প্রতি সার
কম্পোস্ট
১২৫ কেজি
৫০০০-১০০০০কেজি
ইউরিয়া
১ কেজি
৩৫০ কেজি
টিএসপি
০.৮ কেজি
২৫০ কেজি
পটাশ
০.৬৫ কেজি
২৫০ কেজি
সম্পূর্ণ ভার্মি কম্পোস্ট ও টি এস পি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এম ও পি সার ২ কিস্তিতে চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন পর একবার এবং ৩০ -৪০ দিন পর আর একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার দেওয়ার পরপর হালকা সেচ দিতে হবে।
সেচঃ বাঁধাকপি গাছের সারির মাঝে সার দেয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দিন। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়।
আগাছাঃ জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন । সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র নিড়িয়ে আগাছা বাছাই। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।চারা অবস্থা থেকে রসুন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বার নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
পোকামাকড়ঃ
কপির লেদা পোকা-সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কপির কাটুই পোকা- আক্রমণ বেশি হলে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক (কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০ এসপি ২০ মিলি / ৪ মূখ) অথবা ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (ক্যারাটে ২.৫ ইসি অথবা ফাইটার প্লাস ২.৫ ইসি ১৫ মিলি/ ৩ মূখ) ১০ লিটার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
জাব পোকা-সাদা রং এর আঠালো ফাদ ব্যবহার করুন।আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রোগবালাইঃ
মোজাইক ভাইরাস রোগ-জমিতে সাদা মাছি দেখা গেলে (বাহক পোকা) ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।
বাঁধাকপির অল্টারনারিয়া জনিত পাতার দাগ রোগ- ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে।
গোড়া পচা রোগ/ ডেমপিং অফ- কার্বান্ডিজম জাতীয় ছত্রানাশক যেমনঃএমকোজিম ৫০; অথবা গোল্ডাজিম ৫০০ ইসি ১০ মিলি/ ২ মুখ ১০ লি পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ৩ বার গাছের গোড়ায় ও মাটিতে স্প্রে করুন। আক্রমণ বোশি হলে প্রথম থেকে প্রতি লিটার পানিতে ২গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে স্প্রে করুন।
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।
ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১৫০-১৮০কেজি।
সংরক্ষনঃ ছায়ায় সংরক্ষণ করতে হবে। মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। বেশি দিন সংরক্ষণ এর জন্য হিমাগারে রাখতে হবে।
Reviews
There are no reviews yet.