নামঃ সাদা করলা
বৈজ্ঞানিক নামঃ Momordica charantia
বর্ণনাঃ করলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও বাংলাদেশের সকলের নিকট এটি প্রিয় সবজি হিসেবে বিবেচিত। করলার অনেক ঔষধি গুণ আছে। এর রস বহুমুত্র, চর্মরোগ, বাত এবং হাঁপানী রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য করলায় শতকরা ৮৩-৯২ ভাগ পানি, ৪.০-১০.৫ ভাগ শর্করা, ১.৫-২.০ ভাগ আমিষ, ০.২-১.০ ভাগ তেল এবং ০.৮-১.৭ ভাগ আঁশ আছে। অন্যান্য কুমড়া জাতীয় সবজির চাইতে করলায় অধিক পরিমাণে খনিজ ও খাদ্যপ্রাণ রয়েছে।
জলবায়ু ও মাটিঃ
করলা উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু উপযোগী ফসল। এটি বৈরি পরিবেশ সহিষ্ণু উদ্ভিদ। মোটামুটি শুষ্ক আবহাওয়াতেও এর ফলন সম্ভব। করলা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পরাগায়ন বিঘ্নিত হতে পারে। শীতের দু’এক মাস বাদ দিলে বাংলাদেশে বছরের যেকোনো সময় করলার চাষ করা যায়। শীতকালে গাছের বৃদ্ধিও হার কমে আসে। করলার ভালো ফলন পেতে হলে সারাদিন রোদ পায় এবং পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে এমন জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম।
বীজ বপনের সময়ঃ
তীব্র শীত ব্যতীত সারা বছর, তবে উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়রিী থেকে মে মাস।
বীজের হারঃ প্রতি একরে ৮০০ গ্রাম – ১০০০ গ্রাম।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ
সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
জমিতে প্রথমে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন ঢিলা বা আগাছা না থাকে। করলা গাছের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য উত্তমরুপে মাদা তৈরি করতে হবে।
বীজ বপনের পদ্ধতি ও দূরত্বঃ
বীজ বপনের পূর্বে ১৫-২০ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। চারা নার্সারিতে পলিব্যাগে উৎপাদন করে নিলে ভালো হয় সেক্ষেত্রে ৮-১০ সেমি বা তার খেকে বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর দিয়ে পলিব্যাগ ভরে নিতে হবে। প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বুনতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুন মাটির নিচে বীজ পুঁতে দিতে হবে। পলিব্যাগে চারা করলে বীজ গজানোর ১৬-১৭ দিন পর সেই চারা মুল জমিতে রোপন করতে হবে।
এছাড়াও মাদা তৈরী করে সরাসরি বীজ মাদাতে রোপন করা যায়।
মাদার আকারঃ ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি ,গভীরতা ৫০-৫৫সেমি এবং তলদেশের ব্যাস ৪০-৪৫ সেমি।
এক্ষেত্রে সারি থেকে সারি ২ মিটার এবং প্রতি সারিতে ২ মিটার পর পর বীজ বপন করা হয়। ২-৩ সেমি গভীরে প্রতি মাদায় ২ টি করে বীজ বপন করতে হবে এবং চারা গজানোর ৭ দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিটা তুুলে ফেলতে হবে। বীজ বপনের পর প্রয়োজনীয় সেচ্ আবশ্যক।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (শতাংশ প্রতি)
সেচঃ
খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ্ দিতে হবে। পানির অভাব হলে গাছের বৃদ্ধির বিভিন্ন ধাপে ধাপে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন প্রাথমিক অবস্থায় চারার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, পরে ফুল ঝরে যাওয়া, ফলের বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া ও ঝরে যাওয়া ইত্যাদি। করলার বীজ উৎপাদনের সময় ফল পাকা শুরু হলে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
পানি নিষ্কাশনঃ
জুন-জুলাই মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হলে সেচের প্রয়োজন হয় না। জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য বেড ও নিষ্কাশন নালা সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।
মালচিংঃ
সেচের পর জমিতে চটা বাঁধলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাশ চলাচল ব্যহত হয়। কাজেই প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
আগাছা দমনঃ
চারা লাগানোর পর থেকে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় নিড়ানী দিয়ে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষন করে নেয় বলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না ।
বাউনি দেওয়াঃ
বাউনির ব্যবস্থা করা করলার প্রধান পরিচর্যা। চারা ২০-২৫ সেমি উঁচু হতেই ১-২ মিটার উঁচু মাচা তৈরি করতে হবে। কৃষক ভাইয়েরা সাধারণত উচ্ছে চাষে বাউনি ব্যবহার না করে তার বদলে মাদা বা সারির চারপাশের জমি খড় দিয়ে ঢেকে দেয়। উচ্ছের হাছ ছোট বলে এ পদ্ধতিতেও ভালো ঢলন পাওয়া যায়। তবে এভাবে বর্ষাকালে মাটিতে করলা চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজার মূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হয় এজন্য ফলনও কমে যায়। বাউনি ব্যবহার করলে খড়ের আচ্ছাদসের তুলনায় উচ্ছের ফলন ২০-৩০% বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে ফলের গুনগত মানও ভালো হয়।
Reviews
There are no reviews yet.