নামঃ হাইব্রিড লম্বা মরিচ
বৈজ্ঞানিক নামঃ Capsicum annum L.
বর্ণনাঃমরিচ আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। মরিচকে ইংরেজিতে Chili বলা হয়। মরিচ নিত্য ব্যবহৃত মশলা যা তরকারিকে সুস্বাদু করতে বিরাট ভুমিকা রাখে। বাংলাদেরশের প্রায় সব অঞ্চলে মরিচের চাষাবাদ করা হয়। তবে চরাঞ্চালে মরিচের উৎপাদন সবথেকে বেশি হয়ে থাকে।
জলবায়ু ও মাটিঃ
পানি নিষ্কাশনে সুবিধাযুক্ত বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ মাটিতে মরিচ চাষ করা হয়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ঊর্বর দোআঁশ মাটি চাষাবাদের জন্য উত্তম। সব মাটিতে মরিচের চাষ করা গেলেও ক্ষারীয় মাটিতে ফলন ভাল হয় না। মাটির পিএইচ ৬.০-৭.০ হলে মরিচের উৎপাদন ভালো হয়। বন্যা বিধৌত পলি এলাকায় মাঝারী ও উঁচু জমি যেখানে বর্ষার পর ভাদ্র (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাসে ‘জো’ আসে সেখানে মরিচ ভালো হয়। মরিচ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভাল জন্মে।
সাধারণত ২০-২৫ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রী সে. এবং সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় মরিচের গাছের বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে মরিচ গাছের পাতা ঝরে যায় এবং গাছ পচে যায়। পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল-দোআঁশ মাটিতে মরিচ চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ বা পলি দোআঁশ মাটি চাষাবাদের জন্য উত্তম। মাটি অতিরিক্ত ভিজা থাকলে ফুল ও ফল ঝরে পরে। মাটির পি এইচ ৬-৭ হলে মরিচের ফলন ভাল হয়।
মাটির অম্লত্ব দূর করাঃ
পি এইচ এর মান ৫.৮-৬.৫ এর চাইতে কম হলে মাটি বেশি অম্লীয় হয়ে যায় ফলে মরিচের ফলন কমে যাবে। এক্ষেত্রে শেষ চাষের ১০-১৫ দিন আগে প্রতি শতাংশ জমিতে ৩-৪ কেজি হারে চুন মিশিয়ে মাটির অম্লত্ব দূর করতে হবে। চুন প্রয়োগের সময় জমিতে প্রচুর রস না থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে।
বীজ বপনের সময়ঃ বাংলাদেশের আবহাওয়ায় জাত ভেদে বীজ বপনের সময় নিম্নরুপ;
অগ্নিবীণাঃ এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস
জাদু-১০৬৬ঃ জুন থেকে নভেম্বর মাস
সনিঃ তীব্র শীত ব্যতীত সারা বছর চাষ করা যায়।
বীজের হারঃ
একর প্রতি বীজ বপণের হার ১৫০-২০০ গ্রাম।
বীজ তলা তৈরীঃ
মরিচের চারা উৎপাদন করে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। চারার গুণাগুণ ফলনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ কারণে উত্তম চারা উৎপাদনে বিশেষ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি যেখানে পানি দাড়ায় না, যথেষ্ট আলো বাতাস পায়, পানি সেচের উৎস রয়েছে এবং আশে পাশে সোলানেসী পরিবারের কোন উদ্ভিদ নাই এরুপ জমি বীজতলা তৈরির জন্য উত্তম। প্রতিটি বীজ তলার আকৃতি ৩ মি. ১ মি. হওয়া বাঞ্চনীয়। এ ধরনের প্রতিটি বীজ তলায় ১৫ গ্রাম হারে বীজ সারিতে বপন করতে হবে। ভাল চারার জন্য প্রমে বীজতলার মাটিতে প্রয়োজনীয় কম্পোস্ট সার এবং ছাই মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। শোধিত বীজ তৈরিকৃত বীজতলায় ৪-৫ সেমি দূরে দূরে সারি করে ১ সেমি গভীরে সরু দাগ টেনে ঘন করে বপন করতে হবে।
চারার পরিচর্যাঃ
বীজ বপনের পর বীজতলায় বীজ যাতে পোকামাকড় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সেভিন মিশিয়ে মাটিতে দিতে হয়। বীজ বপনের পর অতিবৃষ্টি বা প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পেতে বাঁশের চাটাই বা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে। বাঁশের চাটাই বা পলিথিন সকাল, বিকাল বা রাতে সরিয়ে নিতে হবে।
চারা গজানোর সাথে সাথে ইনসেক্ট প্রুফ নেট দিয়ে চারা ঢেকে দিতে হবে। এই নেট রোদ, বৃষ্টি এবং ভাইরাস বহনকারী বিভিনড়ব পোকামাকড় থেকে চারাকে রক্ষা করবে। বীজ বুনার পর চারা বের না হওয়া পর্যন্ত নেটের উপর ঝরনা দিয়ে সেচ দেয়া আবশ্যক। ৫-৭ দিনের মধ্যে বীজ গজায়। চারা ৩-৪ সেমি হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা পাতলা করা হয়।
বীজতলায় আগাছা গজালে ১-২ বার নিড়ানী দিয়ে আগাছা বেছে মাটি আলগা করে দিলে চারা ভাল হয়। চারা তোলার আগের দিন বীজতলায় সেচ দিলে মাটি নরম হয়। এতে শিকড়ের ক্ষতি না করে সহজেই চারা তোলা যায় এবং চারা সহজেই জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়। খাট, মোটা কাÐ ও ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট চারা লাগানোর জন্য ভাল।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ
সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ উচু জমি নির্বাচন করে ৫/৬ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। মাঠে সরাসরি বীজ বপনের জন্য ১ মিটার প্রস্থ বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি প্রস্থ নালা রাখতে হবে। বেড সাধারণত ১৫-২০ সেমি উঁচু হবে।
চারা বোপনের পদ্ধতি ও দূরত্বঃ
সারি থেকে সারি ৫০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছ ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের মুহুর্তে পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতেহবে। এর ফলে মাটিতে সহজে গাছ নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগের নিয়মঃ
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগের নিয়ম
অন্যান্য পরিচর্যা :
সময়মত নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ্ দিতে হবে।
Reviews
There are no reviews yet.