নামঃ লাল বাঁধাকপি
বৈজ্ঞানিক নামঃAnanas sativus
বর্ণনাঃ শীতের অন্যতম ফসল বাঁধাকপি। ঠান্ডা পড়তে না পড়তেই বাঁধাকপি বাজারে চলে আসে। বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় এই সবজি ভীষণই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। লাল রঙের এই বাঁধাকপিও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ রয়েছে এই জাতীয় বাঁধাকপিতে। সাদা বাঁধাকপির থেকে পুরু আবরণ যুক্ত এই সবজি, মচমচে এবং লালচে বেগুনি বর্ণের।
উপযুক্ত জলবায়ু এবং মাটি ঃ
দো-আঁশ মাটি লাল বাঁধাকপি চাষের জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। তবে এঁটেল মাটিতেও এই সবজির চাষ করা যায়। উপকূল অঞ্চলেও যেখানে লবনাক্ত মৃত্তিকা সেখানেও এই জাতীয় বাঁধাকপির চাষ করা যায়। সেচ যেই জমিতে ভালো দেওয়া যাবে, সেইখানে লাল বাঁধাকপির চাষ করা উচিত। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, অতি বৃষ্টিতে যেন জমিতে জল না দাঁড়ায়, তাহলে চাষে ক্ষতি হতে পারে।
চাষের পদ্ধতিঃ
অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেকার সময় হল লাল বাঁধাকপির চারা বোনার উপযুক্ত সময়। বীজতলায় বেড করার ক্ষেত্রে জমি খুব ভালো করে তৈরী করে বীজ পুঁততে হবে। প্রতি বর্গমিটার বেডের জন্য ১ কেজি হারে পচা গোবর সার মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রতি হেক্টর জমির চারা তৈরি করতে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম বীজের দরকার। ১গ্রাম বীজ থেকে প্রায় ১০০টি চারা গজানো সম্ভব। অগভীর করেই লাল বাঁধাকপির বীজ পোঁতা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে বীজ যাতে মাটির বেশি গভীরে না যায়। রোদে বা অতিবৃষ্টিতে বীজতলার ক্ষতি যাতে না হয়, তাই বীজ বপন করার পর বীজতলায় ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
বীজ বপনের একমাস হয়ে গেলে তা চারা রোপনের উপযুক্ত হয়। যেই জমিতে চারা বোনা হবে, সেই জমি আগে থেকে আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে, এবং তাতে চাষ দিয়ে নিতে হবে। শেষবার চাষ দেওয়ার সময় গোবর সার মাটির সঙ্গে উপযুক্ত ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। একের সঙ্গে অপরের নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে চারা রোপন করা উচিত। ঘন অথবা সংঘবদ্ধ ভাবে লাল বাঁধাকপির চারা লাগানো যাবে না। ঘন ভাবে চারা লাগালে কপিতে পোকার আক্রমণ দেখা যেতে পারে। এছাড়াও কপির আয়তন ছোট হয়ে যেতে পারে।
সার প্রয়োগ ঃ
লাল বাঁধাকপি চাষের ক্ষেত্রে জৈব সার ব্যবহার করা সবথেকে ভালো। পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার এই বিশেষ প্রজাতির বাঁধাকপি চাষে সবথেকে উপযুক্ত সার। যদি জৈব সারের পরিবর্তে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয়, তাহলে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ২ কিস্তিতে ইউরিয়া ও এমওপি সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয় না।
সেচঃ
এই বিশেষ প্রজাতির বাঁধাকপি চাষে সেচের ভীষণ ভাবেই প্রয়োজন পারে। লাল বাঁধাকপির পাতা অত্যন্ত রসালো হওয়ায়, এই সবজির চাষে জলের ভালো মতনই দরকার পড়ে। চারা রোপন করার পর অবশ্যই সেচ দিতে হবে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না চারা নতুন পাতা ছাড়ছে, ততদিন সেচ দিয়ে যেতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকলে সেচের দরকার ততটাও পড়ে না। জমিতে যাতে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে তার খেয়াল রাখতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগদমনঃ
ডায়মন্ড ব্যাক মথ লাল বাঁধাকপির পক্ষে এক ক্ষতিকর পোকা হিসাবে বিবেচিত হয়। এই পোকার আক্রমণ করে বাঁধাকপির পাতাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে নেয়, যার ফলে পাতা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। বাঁধাকপির মাথা বাঁধা হয়ে গেলে কালচে রঙের লেদাপোক পাতা খেতে খেতে কপির ভিতরে ঢুকে মাথা নষ্ট করে দেয়। এই পোকার উপদ্রব দেখা দিলে, কঞ্চি পুঁতে দিতে হবে, যাতে তার ওপর পাখি বসতে পারে। এই পাখিগুলিই পোকাগুলিকে ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে নেয়, যার ফলে বাঁধাকপি বেঁচে যায়।
ফসল সংগ্রহঃ
চারা রোপণ হয়ে যাওয়ার এক থেকে দেড় মাস নাগাদ মাথা বাঁধতে শুরু করে এবং তিন মাসের মধ্যে কপির মাথা বাঁধা শেষ হয়ে যায়। এক জায়গা থেকে কপি না তুলে ক্ষেতের বিভিন্ন জায়গা থেকে কপি সংগ্রহ করা উচিত।
Reviews
There are no reviews yet.