নামঃ পেঁপে
বৈজ্ঞানিক নাম :Carica papaya
বর্ণনাঃ পেঁপে চাষ পদ্ধতি – পেঁপে একটি স্বাস্থ্যকর ফল। শর্করা, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ ছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘পেপেন’ থাকে। ইহা প্রোটিন খাদ্য হজমের সহায়ক।
জমি নির্বাচন :
জল নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত দোঁয়াশ বা বেলে দোঁয়াশ মাটি পেঁপে চাষের উপযোগী।
জাত :
ওয়াশিংটন, কোয়েম্বাটুর-১ ও কোয়েম্বাটুর-২, কুর্গ হানিডিউ, সোলো সানরাইজ।
হাইব্রিড জাত : পুসাডোয়ার্ফ, পুসা নানহা, পুসা ম্যাজ্যেষ্টিক, পুসা রাসেল ইত্যাদি
বীজ : বীজ বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা দরকার। প্রতি হেক্টরের জন্য ১৫০ ৩০০ গ্রাম বীজের দরকার। বীজতলায় চারা তৈরী করে নিতে হবে।
গাছ রোপনের পদ্ধতি :
৪৫ সেমি. লম্বা, ৪৫ সেমি. চওড়া ও ৪৫ সেমি. গভীর গর্ত খুঁড়ে গাছ লাগাবার ১ মাস আগে প্রতি গর্ত্তে ১০ কেজি গোবর বা আবর্জনা সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করতে হবে।
চারা লাগাবার ভাল সময় চৈত্র মাসের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখ মাস পৰ্য্যন্ত প্রতি গর্ত্তে ১-৩টি চারা গাছ রোপন করতে হবে।
লাগাবার দূরত্ব :
সাধারণতঃ সারি থেকে সারি ১.৮ মিটার ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১.৮ মিটার হওয়া উচিত। প্রতি হেক্টরে চারা লাগে প্রায় ৯ হাজার। তবে যেখানে রৌদ্রের প্রখরতা বেশী সেখানে ১.৫ x ১.৫ মিটার দূরত্বে গাছ লাগান উচিত। এতে প্রতি হেক্টরে চারা লাগবে ১২-১৩ হাজার।
মাদা তৈরিঃ
চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে ১.৮ – ২ মিটার।
চারা রোপণের জন্য ৪৫*৪৫*৪৫ সেমি গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটি একপাশে ও নিচের মাটি অন্য পাশে রাখতে হবে।
চারা রোপণের ১৫-২০ দিন আগে গথের উপরের মাটির সাথে ১৫ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ৫০০গ্রাম টিএসপি, ২০ গ্রাম জিংক সালফেট, ২০ গ্রাম বরিক এসিড মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে এবং বাগানে সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ :
প্রতি বৎসর প্রতি গাছের ১৫ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগ করতে হবে।
তা ছাড়া প্রতি গর্তে ১৫০ গ্রাম নাইট্রোজেন, ১৫০ গ্রাম ফসফেট ও ১৫০ গ্রাম পটাশ তিনবারে সমান ভাগ করে গাছ লাগাবার পর তিন মাস অন্তর অন্তর দিতে হবে।
প্রতি হেক্টরে প্রতি বছর সার লাগে ৪৫০ কেজি, নাইট্রোজেন ৪৫০ কেজি ফসফেট এবং ৪৫০ কেজি পটাশ।
মাটিতে যথেষ্ট রস না থাকলে সার দেওয়ার পর সেচ দিতে হবে।
পরিচর্যা :
গাছের গোড়া থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে ও কোদাল দিয়ে গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
চারা লাগাবার ৪-৫ মাস পরে ফুল আসলে প্রতি গর্ত্তে একটি করে সবল স্ত্রী গাছ রেখে বাকী গাছগুলো তুলে ফেলতে হবে।
বাগানের মোট গাছের শতকরা ১০টি পুরুষ গাছ রাখা দরকার। এগুলি বাগানের চারদিকে ছড়িয়ে থাকতে হবে।
পেঁপের ফলন ও আকার সেচের উপর নির্ভর করে। সাধারণতঃ শীতের সময় ১০-১২ দিন পর একটি করে ও গরমের সময় ৭-৮ দিন পর একটি করে সেচ দেওয়া দরকার।
লম্বা রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় জল জমে না থাকে। সেচের পর ‘জো’ হলে কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
পেঁপের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনঃ
পেঁপের সাধারণত যে রোগ গুলো দেখা যায় সে গুলো হলো-
ঢলেপড়া ও কাণ্ড পঁচা রোগঃ
পাতা কোঁকড়ানো
এ্যানথ্রাকনোজ
মোজাইক রোগ
এবং পোকার মধ্যে মিলিবাগ।
ঢলেপড়া ও কাণ্ড পঁচা রোগ
বাগানের মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে চারা ঢলেপড়া রোগ দেখা দিতে পারে। এবং বর্ষাকালে কাণ্ডপচা রোগ হতে পারে। কাণ্ড পচা রোগ হলে গাছের গোড়ার দিকে বাদামি বর্ণের পানি ও ভেজা দাগ দেখা যায়। এ রোগ হলে আক্রান্ত চারা ও গাছ মারা যায় ও ঢলেপড়ে।
প্রতিকারঃ
বীজতলার মাটি শুকনা রাখতে হয় এবং ছত্রাক নাশক ২-৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
আক্রান্ত চারা উঠিয়ে ফেলতে মাটিতে পুতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২ গ্রাম রিডোমির এম জেড-৭২ ছত্রাক নাশক প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে কাণ্ডে স্প্রে করতে হবে।
পেঁপের মোজাইক রোগ
এটি ভাইরাস জনিতএকটি রোগ। এ রোগের কারণে পেঁপে গাছের পাতায় হলুদ রং এর ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। পাতার বেঁটা বেঁকে থাকে এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। যাব পোকার আক্রমণে এরোগ বিস্তার লাভ করে।
আক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
রোগ বিস্তার করা পোকা দমন করে এ রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
এজন্য নোভাস্টার ৫৬ইসি ০২ মিলি বা হেমিডর বা পিমিডর বা এডমায়ার ২০০ এসএল ০১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৭ দিন স্প্রে করতে হবে।
মিলিবাগ পোকা
বর্তমান সময়ে মিলিবাগ পেঁপের একটি ক্ষতিকর পোকা হিসাবে আর্বিরভাবহয়েছে। এ পোকার আক্রমণে গাছের পাতা ও ফর শুটি মোল্ড রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত পাতা ও ফলে সাদা পাউডারের মতো আবরণ পড়ে। আক্রমণের মাত্র বেশি মাত্রায় হলে গাছ মারা যেতে পারে।
আক্রমণের প্রথম দিকে আক্রান্ত পাতা ও ফল বা কাণ্ড সংগ্রহ করে মাটিতে পুতে বা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে।
আক্রমণ বেশি হলে এডমায়ার ২০০এসএল ০.২৫ মি.লি. হারে বা সাবানের পানি ৫ গ্রাম মিশিয়ে ৫-৭ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
ফল ধরার সময় :
চারা লাগাবার ৮-১০ মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। ফল খুব বেশী থাকলে সবগুলি সমান বড় হতে পারে না। কিছু ফল ছোট বা মাঝারী অবস্থায় পেড়ে নিতে হবে।
ফল সংগ্রহঃ
পেঁপে সবজি হিসাবে ব্যবহার করলে ফলের কষ যখন হালকা হয়ে আসে এবং জলীয় ভাব ধারণ করবে তখন সংগ্রহ করতে হবে। ফলের গায়ে যখন হালকা হলুদ ভাব দেখা যাবে তখন ফল হিসাবে সংগ্রহ করতে হবে।
পেঁপের ফলনঃ
উপযুক্ত নিয়মে ও পেঁপে চাষ করার নিয়মগুলো অনুশরণ করলে হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ৬০ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই আছে। এই ভিটামিন গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি ত্বক, চুল ও মাড়ির জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা চোখের জন্য উপকারী।
হজমশক্তি বাড়ায়ঃ
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে যা খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও প্রচুর পানি ও দ্রবণীয় ফাইবার আছে। যারা হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাঁরা নিয়মিত পাকা বা কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে পেঁপে খুব উপকারি।
ওজন কমায়ঃ
প্রাকৃতিকভাবে আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে পেঁপে। পেঁপেতে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম থাকে এবং উপকারী ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে বলে যারা ওজন সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা পেপে খেতে পারেন নিয়মিত।
কোলেস্টেরল কমায়ঃ
পেঁপেতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। আর পেঁপেতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে বাঁধা প্রদান করে। অন্যান্য কোলেস্টেরল যুক্ত খাবারের বদলে পেঁপে খান। তাহলে আপনার কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ত্বকের জন্য উপকারীঃ
ত্বকের জন্য পেঁপে অনেক উপকারী। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে, একজিমা রোধ করতে, এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে পেঁপে খুবই উপকারী।
ভিটামিন বি এর অভাব পূরন করেঃ
পেঁপেতে আছে ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-৬, এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফলেট নামের একটি উপকারি ভিটামিন আছে। তাই ভিটামিন বি এর অভাব পূরণ করার জন্য নিয়মিত পেঁপে খাওয়া উচিত।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যারোটিনের উৎসঃ
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ফ্লেভানয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্সান্থিন আছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুস ও অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ
চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখা উচিত। পেঁপে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করে।
হাড় মজবুত করেঃ
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে। তাছাড়া আর্থারাইটিস, অস্টিও আর্থারাইটিস দূর করতে সাহায্য করে পেঁপে।
ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ
পেঁপে ক্যান্সার নিরাময়েও ভূমিকা রাখে, পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনোক্সিড যা দেহে ক্যান্সারের কোষ তৈরিতে বাঁধা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁপের বিটা কেরোটিন উপাদান কোলন ক্যান্সার, প্রোসটেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
উচ্চরক্তচাপ কমায় ঃ
পেঁপে আমাদের দেহের সঠিক রক্ত সরবরাহে কাজ করে। আমাদের দেহে জমা থাকা সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে যা হৃদপিণ্ডের রোগের জন্য দায়ী। উচ্চরক্তচাপ আক্রান্তরা কাঁচা বা পাঁকা পেঁপে খেতে পারেন। দুটোই উপকারী।
তাছাড়া শ্বাস- প্রশ্বাসের আরোগ্য ক্ষেত্রে পেঁপের ভূমিকা অনেক। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা কমে যায়। দাঁতের যন্ত্রণার অব্যর্থ ওষুধ হল পেঁপে। অন্ত্রের কৃমি রোধ করে পেঁপে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা পাকা পেঁপের বদলে কাঁচা পেঁপে খান। কারণ পাকা পেঁপে খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
Reviews
There are no reviews yet.